আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো বর্ণমালা কাকে বলে, বর্ণমালা কত প্রকার এবং বর্ণমালা কয়টি এর সম্পর্কে।
কোনো ভাষায় প্রাথমিক স্তর হলো বর্ণ (letter). আপনি যদি কোনো ভাষাকে জানতে এবং বুঝতে চান তাহলে প্রথমে বর্ণ শিখতে হবে।
মনে রাখবেন, বর্ণ ছাড়া কোনো শব্দ তৈরি করা যায় না। আবার শব্দ ছাড়া কোনো বাক্য গঠন করা যায় না।
আপনি যদি কোনো মানুষের সাথে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে চান তাহলে এই বাক্যের প্রয়োজন হবে।
বলা হয় বর্ণ হলো সকল ভাষার মূল ভিত্তি বা প্রাণ। মনে ভাব প্রকাশ করার জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চিহ্নকে মূলত বর্ণমালা বলা হয়ে থাকে।
আমরা যে বাংলা বর্ণ গুলো অধ্যয়ন করেছি বাংলা ভাষায় সেগুলো সংস্কৃত ভাষা থেকে প্রবর্তৃত।
চিনা ভাষায় এমন চিহ্ন রয়েছে যার মাধ্যমে মনের সম্পর্ন ভাব প্রকাশ করা যায়। কিন্তু, অন্যান্য দেশে একটি চিহ্নের মাধ্যমে মনে ভাব প্রকাশ করা যায় না।
আমাদের বাংলা ভাষায় নেই বললে ভুল হবে। কারণ, আমাদের ভাষায় ও কিছু কিছু বর্ণ রয়েছে যার মাধ্যমে একটি শব্দ আছে।
যেমন- “ঐ”, এখানে ঐ মানে দুরের কোনো কিছুকে দির্নেশ করার ক্ষেত্রে বুঝানো হয়েছে)। মোট কথা বর্ণমালা হলো ঐ সকল চিহ্ন বা সংকেত যার সমষ্টি মিলে কিছু বুঝানো হয়।
বর্ণমালা কাকে বলে সেটা জানার আগে আপনাকে জানতে হবে বর্ণ কাকে বলে, তাহলে সহজে বুঝতে পারবেন।
বর্ণ কাকে বলে?
মানুষ কথা বলার সময় যে আওয়াজ বের করে, সেই আওয়াজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকে লিখে বুঝানোর জন্য যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে বর্ণ বলে।
বর্ণের উদাহরণ হলো অ, আ, ই, ঈ, ক, খ, গ, ঘ ইত্যাদি। ইংরেজি বর্ণ হলো a, b, c, d.
বর্ণমালা কাকে বলে?
বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জন বর্ণ মিলে যে মোট পঞ্চাশটি বর্ণ রয়েছে তাকে বর্ণমালা বলে।
বাংলা ভাষায় অ থেকে চন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত মোট ৫২ টি বর্ণ রয়েছে। ঠিক একই ভাবে ইংরেজিতে A থেকে Z পর্যন্ত ২৬টি বর্ণ রয়েছে।
বাংলা ভাষাতে যেমন অ, আ, ক, খ না চিনলে ভাষা শেখা যায় না ঠিক তেমনি ইংরেজি ভাষায় a, b, c, d না চিনলে এই ভাষা শেখা যায় না।
ভাষার এক একটি অক্ষরকে বর্ণ বলা হয়। ইংরেজিতে A থেকে Z পর্যন্ত মোট ২৬ টি অক্ষর বা বর্ণ রয়েছে। এই ২৬ টি বর্ণকে একত্রে বর্ণমালা বলা হয়।
বর্ণমালা কত প্রকার?
বর্ণমালা সাধারণত দুই প্রকার। যথা
- স্বরবর্ণ
- ব্যঞ্জন বর্ণ
চলুন এই দুই প্রকার বর্ণমালা সম্পর্কে নিচে থেকে বিস্তারিত জেনে আসি।
স্বরবর্ণ কাকে বলে?
যে বর্ণ অন্য বর্ণের সাহায্য ছাড়া নিজে নিজে উচ্চারণ হতে পারে তাকে স্বরবর্ণ বলে।
বাংলা ভাষায় মোট ১১টি স্বরবর্ণ রয়েছে। যেমন – অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।
স্বরবর্ণকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা
- হ্রস্ব স্বর
- দীর্ঘ স্বর
হ্রস্ব স্বর কাকে বলে: যে সকল স্বরবর্ণ গুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে উচ্চারণ করা যায় তাকে হ্রস্ব স্বর বলে। যেমন – অ, আ, উ, ঋ।
দীর্ঘ স্বর কাকে বলে: যে সকল স্বরবর্ণ গুলোকে উচ্চারণ করার জন্য দীর্ঘ সময় লাগে তাকে দীর্ঘ স্বর বলে। যেমন – আ,ঈ, ঊ, এ, ঐ, ও, ঔ।
ব্যঞ্জন বর্ণ কাকে বলে?
যে বর্ণ অন্য বর্ণের সাহায্য ছাড়া নিজে নিজে উচ্চারণ হতে পারে না তাকে ব্যঞ্জন বর্ণ বলে।
বাংলা ভাষায় মোট ৩৯টি ব্যঞ্জন বর্ণ রয়েছে। যেমন – ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ , ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, শ, ষ, স, হ, ড়, ঢ়, য়, ৎ, ং, ঃ, ঁ।
ব্যঞ্জন বর্ণের শ্রেণী বিভাগ রয়েছে। যেমন –
স্পর্শ বর্ণ: ক থেকে ম পর্যন্ত মোট ২৫ টি বর্ণ রয়েছে। এই বর্ণ গুলো উচ্চারণ করার সময় মুখের কোনো কোনো স্থান স্পর্শ করে বলে এদেরকে স্পর্শ বর্ণ বলা হয়।
এই ২৫টি স্পর্শ বর্ণকে আবার ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন,
- ক বর্ণ – ক, খ, গ, ঘ, ঙ
- চ বর্ণ – চ, ছ, জ, ঝ, ঞ
- ট বর্ণ – ট, ঠ, ড, ঢ, ণ
- ত বর্ণ – ত, থ, দ, ধ, ন
- প বর্ণ – প, ফ, ব, ভ, ম
কণ্ঠ বর্ণ: ক, খ, গ, ঘ, ঙ এই বর্ণ গুলো উচ্চারণ করার সময় জিহ্বামূলে কণ্ঠে স্পর্শ করে বলে একে কণ্ঠ বর্ণ বলে।
তালব্য বর্ণ: চ, ছ, জ, ঝ, ঞ এই বর্ণ গুলো উচ্চারণ করার সময় জিহ্বা তালুতে স্পর্শ করে বলে এই বর্ণ গুলেকে তালব্য বর্ণ বলে।
মূর্ধণ্য বর্ণ: ট, ঠ, ড, ঢ, ণ এই বর্ণ গুলো উচ্চারণ করার সময় জিহ্বাবের উল্টিয়ে উচ্চারণ করতে হয় বলে এই বর্ণ গুলোকে মূর্ধণ্য বর্ণ বলে।
দন্ত বর্ণ: ত, থ, দ, ধ, ন এই বর্ণ গুলো উচ্চারণ করার সময় জিহ্বা দাঁতে স্পর্শ করে বলে এই বর্ণ গুলোকে দন্ত বর্ণ বলা হয়।
ওষ্ঠ্য বর্ণ: প, ফ, ব, ভ, ম এই বর্ণ গুলো উচ্চারণ করার সময় ওষ্ঠ্যের সাথে অধরের স্পর্শ হয় বলে এই বর্ণ গুলোকে ওষ্ঠ্য বর্ণ বলে।
নাসিকা বর্ণ: ঙ, ঞ, ণ, ন, ম এই বর্ণ গুলো সাধারণত নাসিকার সাহায্যে উচ্চারণ করা হয় বলে এই বর্ণ গুলোকে নাসিকা বর্ণ বলা হয়।
অন্তঃস্ব বর্ণ: য, র, ল, ব এই বর্ণ গুলো স্পর্শ বর্ণ এবং উম্ম বর্ণের মাঝামাঝি বলে এদেরকে অন্তঃস্ব বর্ণ বলা হয়।
উষ্ম বর্ণ: শ, ষ, স, হ এই বর্ণ গুলো উচ্চারণ করার সময় শ্বাসের প্রাধান্য থাকে বলে এগুলোকে উষ্ম বর্ণ বলে।
মহা প্রাণ বর্ণ: প্রত্যেক বর্ণের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ণের উচ্চারণের সময় প্রাণ জোরে উচ্চারণ হয় বলে এই বর্ণ গুলোকে মহা প্রাণ বর্ণ বলে। যেমন – খ, ঘ, ছ, ঝ ইত্যাদি।
অল্প প্রাণ বর্ণ: প্রত্যেক বর্ণের প্রথম ও তৃতীয় বর্ণের উচ্চারণের হালকা প্রাণ ভাবে উচ্চারণ হয় বলে এই বর্ণ গুলোকে অল্প প্রাণ বর্ণ বলে। যেমন – ক, গ, চ, জ ইত্যাদি।
শেষ কথা
আজকে আমরা জানলাম বর্ণমালা কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি এর ব্যাপারে। আশাকরি, বর্ণমালা পরিচয়ের ব্যাপারে আপনারা সহজে বুঝতে পারছেন।
বর্ণমালা সম্পর্কে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে নিচের কমেন্টে অবশ্যই লিখে জানাবেন এবং ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।