যদিও আপনি মোবাইল বা কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন কিন্তু আসলে আপনি জানেন না ইন্টারনেট কি (What is internet)? কি আমি ঠিক বলছি তো?
তাছাড়া, বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের নাম শুনেনি এমন মানুষ হয় তো পাওয়া যাবে না। কারণ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক কঠিন কাজ সহজ হয়ে গেছে।
অনলাইন কেনাকাটা, পেমেন্ট করা থেকে শুরু করে তথ্য আদান-প্রদান করা সহ প্রায় সব কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে।
বর্তমান টেকনোলজির সাথে ইন্টারনেট মিশে গিয়ে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, আপনি যদি এক দিন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারেন তাহলে থাকতে পারবেন না।
বলতে গেলে বলা যায় ইন্টারনেট ছাড়া পুরো দুনিয়া এক প্রকার অচল। ইন্টারনেট ছাড়া আপনি কোনো কিছুই করতে পারবেন না।
বর্তমানে বাচ্চারা থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষরা সবাই স্মার্টফোনে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। আপনি যদি তাদের কাছে প্রশ্ন করেন তারা কি করছেন, তখন উত্তর দিবে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি।
ইন্টারনেটে রাত দিন ২৪ ঘন্টা মানুষ যুক্ত থাকছে। কেউ প্রিয়জনের সাথে কথা বলছে, কেউ অনলাইনে ভিডিও দেখছে, কেউ তথ্য সংগ্রহ করছে। বতলে গেলে সবাই ইন্টারনেট নিয়ে ব্যাস্ত।
আপনি হয়তো এখন মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আমার এই আর্টিকেলটি পড়ছেন?
তাহলে চলুন নিচে থেকে জেনে আসি Internet কি, ইন্টারনেট কত প্রকার, কিভাবে কাজ করে, এর সুবিধা এবং অসুবিধা সহ আরো বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে।
ইন্টারনেট কি? (What is internet)
ইন্টারনেট হলো ইন্টারকানেক্টড নেটওয়ার্ক এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটা রাউটার বা বিশেষ গেটওয়ের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গুলোকে একটি অপরের সাথে সংযোগ গঠন করে।
অনেকে ইন্টারনেটকে নেট বলে থাকে। মূলত ইন্টারনেট দুইটি শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। যেমন – ইন্টার (inter) অর্থ – ভিরত বা মধ্যে। আর নেট (net) অর্থ – জাল।
তাহলে ইন্টারনেট শব্দের পূর্ণ অর্থ হলো অন্তর্জাল। যেটা সংযুক্ত নেটওয়ার্ক তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগের একটি সহজ মাধ্যম বা পদ্ধতি।
অসংখ্য কম্পিউটার ডিভাইস গুলো একে অপরের সাথে যুক্ত করে তথ্য আদান-প্রদান করার পদ্ধতিকে ইন্টারনেট বলা হয়।
সহজ ভাবে বলতে গেলে অনক গুলো কম্পিউটারকে একটি মাত্র নেটওয়ার্কে যুক্ত করাকে ইন্টারনেট ওয়ার্কিং বলে।
Internet হলো এমন একটি নেটওয়ার্ক (network) যেখানে একটি কম্পিউটারের ব্যবহারকারীদের অনুমতি থাকলে অন্য কম্পিউটার গুলো থেকে তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
আশাকরি ইন্টারনেট মানে কি এর সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা পেয়েছেন।
ইন্টারনেট কাকে বলে?
ইন্টারনেট হলো এমন একটু computer network যা সব সময় ব্যাস্ত থাকে। সারা বিশ্বের সব কম্পিউটার গুলো যে নেটওয়ার্ক দ্বারা একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে আছে তাকে সেই নেটওয়ার্ককে ইন্টারনেট বলে।
আপনি যখন মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে এই নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হন তখন এই নেটওয়ার্ক বিশাল জালে ভাগ হয়ে দাঁড়ায়। তখন এটাকে বলা হয় গ্লোবাল নেটওয়ার্ক।
যে গ্লোবাল নেটওয়ার্কে আপনি যদি যুক্ত আছেন, তার সাথে যুক্ত হওয়া সকল কম্পিউটার গুলোর তথ্য আপনি মোবাইলে বা কম্পিউটারে পেয়ে যাবেন।
এই গ্লোবাল নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে সারা বিশ্বের কম্পিউটারে থাকা তথ্য গুলো গ্রহণ করার জন্য যে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয় সেটাই হলো ইন্টারনেট।
ইন্টারনেট কত প্রকার ও কি কি?
দেখুন বর্তমান প্রযুক্তি বা ইন্টারনেট আমাদের জীবনযাত্রা অনেকটা সোজা করে দিয়েছে। যে কাজ গুলো করার জন্য আমাদের ঘরের বাহিরে যেতে হতো সেই কাজ গুলো আপনি ঘরে বসে কয়েক মিনিটে করতে পারছেন।
যদিও ইন্টারনেট আমাদের জীবনযাত্রার নানা ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকে ইন্টারনেটের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানে না।
ইন্টারনেটকে সাধারণত ৬ টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
১. ডায়াল-আপ ইন্টারনেট : স্ট্যান্ডার্ড ফোন লাইনের মাধ্যমে আমরা যে ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ পেয়ে থাকি তাকে ডায়াল-আপ ইন্টারনেট বলে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোবাইলে মাত্র ১০ সেকেন্ডে ইন্টারনেট সংযোগ পাবেন।
২. ডিএসএল ইন্টারনেট : ডায়াল ইন্টারনেট স্লো কাজ করার জন্য বাজারে নতুন ডিএসএল ইন্টারনেট আনা হয়। এটা ডায়াল-আপ থেকে ১০০ গুণ গতিতে কাজ করে।
৩. স্যাটেলাইট ইন্টারনেট : স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সংযোগ তারবিহীন এবং দ্রুত গতিতে সার্ভিস দিতে পারে।
৪. ক্যাবল ইন্টারনেট : ক্যাবল ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ডের সংযোগে কম্পিউটার বা ল্যাটপটে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়। এটি অনেক দ্রুত গতির এবং জনপ্রিয় ইন্টারনেট।
৫. ওয়ারলেস ইন্টারনেট : দুইটা ডিভাইস পরস্পর কাছাকাছি দুরুত্বের মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংযোগ করতে পারে তাকে ওয়ারলেস ইন্টারনেট বলে।
৬. সেলুলার ইন্টারনেট : স্মার্ট মোবাইল ফোন গুলোতে যে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করা হয় তাকে সেলুলার ইন্টারনেট বলে। বর্তমানে এটা অনেক জনপ্রিয়।
ইন্টারনেট এর জনক কে?
আমরা সকলে মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করি। কিন্তু, আপনি যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন সেটার জনক কে জানেন?
অবশ্যই আমরা যে ইন্টারনেট প্রতিদিন ব্যবহার করি সেই ইন্টারনেট কে আবিষ্কার করেছেন সেটার ব্যাপারে আমাদের জানা উচিত।
ইন্টারনেট আবিষ্কারের কথা বলতে গেলে দুই ব্যাক্তির নাম আগে চলে আসে। তারা হলেন রবার্ট ই কান এবং ভিনটন জি কার্ফ।
এই দুই জন ব্যাক্তি প্রথমে Transmission Control protocol (TCP) এবং Internet protocol (IP) এই দুইটা প্রটোকল আবিষ্কার করেন।
এই দুইটা প্রটোকল আবিষ্কারের জন্য ইন্টারনেট আবিষ্কার করা অনেক সহজ হয়ে গেছে।
ইন্টারনেট এর পূর্ণরূপ কি? (Internet full meaning)
ইন্টারনেট এর পূর্ণরূপ হলো ইন্টারকানেক্টড নেটওয়ার্ক (interconnected network).
ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?
আমার জেনেছি ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বিশাল জাল, যাকে আমরা ইন্টারনেট বলি। এখন প্রশ্ন হলো এই ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?
এখন আমরা কিভাবে ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারি বা কাজ করতে পারি। ইন্টারনেট হলো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যা সারা বিশ্বের কম্পিউটার গুলোর সাথে যুক্ত হয়ে আছে।
ইন্টারনেটে কাজ করার জন্য গ্লোবাল নেটওয়ার্কে তার বা বেতার যে কোনো একটির মাধ্যমে যুক্ত হতে হবে।
এরপর গ্লোবাল নেটওয়ার্কে জড়িত থাকা বিভিন্ন কম্পিউটারের সাথে আমাদের কম্পিউটার router এবং server এর মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন তথ্য এবং ডাটা গুলো সংগ্রহ করে নেয়।
আপনি যদি ইন্টারনেটে কাজ করতে চান তাহলে ৩ টা জিনিস দরকার হবে।
১. একটি ডিভাইস : ইন্টারনেটে কাজ করার জন্য প্রথমে আপনার যেকোনো একটি ডিভাইস প্রয়োজন হবে। যেমন – কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট।
২. Internet server provider : এবার আপনাকে যেকোনো ইন্টারনেট সার্ভার প্রোভাইটারের কাছ থেকে ইন্টারনেট সেবা নিতে হবে। যেমন – জিপি, রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক এই কোম্পানির কাছ থেকে ইন্টারনেট নিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন সংযোগ করতে হবে। আপনি যখন ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ করবেন সেই অবস্থাকে বলা হয় অনলাইন।
৩. ওয়েব ব্রাউজার : ডিভাইসে ইন্টারনেট কানেকশন যুক্ত করার পরে ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য আপনার ওয়েব ব্রাউজার বা অ্যাপ্লিকেশন প্রয়োজন হবে।
ওয়েব ব্রাউজার এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার যা আপনাকে ইন্টারনেটের সেই নেটওয়ার্ক জালের সাথে যুক্ত করা হবে। যাকে আমরা গ্লোবাল নেটওয়ার্ক বলি।
এরপর ডোমেইন, আইপি এড্রেস এবং ওয়েবসাইটের গ্লোবাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত অন্যান্য কম্পিউটার থেকে ফাইল, ডাটা, ডকুমেন্ট গুলো দেখতে পায়।
ইন্টারনেট এর ব্যবহার ও সুবিধা
ইন্টারনেট ব্যবহার করা আমাদের জন্য এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে একদিন যদি ইন্টারনেট বন্ধু থাকে তাহলে পুরো বিশ্ব অচল হয়ে যাবে।
তাছাড়া, নিচে আমি কিছু ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে বলবো সেগুলো ছাড়া সারা মানুষ অচল হয়ে যাবে।
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা।
- অফিসিয়াল বা অন্যান্য তথ্য আদান-প্রদান করার জন্য ইমেইল ব্যবহারে ইন্টারনেট।
- সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে ইন্টারনেটের ব্যবহার।
- পরিক্ষা ও গবেষণার কাজে ইন্টারনেট।
- ই-বুক ও অনলাইন ম্যাগাজিন পড়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট।
- সময় কাটানোর জন্য ইন্টারনেটে ভিডিও দেখা।
- সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট।
- অনলাইনে গেম খেলা।
- অনলাইন থেকে ইনকাম যেমন ফ্রিল্যান্সিং করা।
- অনলাইনে পড়াশোনা করা।
- চিকিৎসা ক্ষেত্রে ইন্টারনেট।
- পুরো বিশ্বের খবর জানার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার।
- অজানা তথ্য জানার জন্য ইন্টারনেটের ব্যবহার।
- প্রয়োজনীয় ফাইল, ডকুমেন্ট, অ্যাপ, সফটওয়্যার সহ অন্যান্য বিষয় বস্তু ডাউনলোড করা।
- অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করা।
ইন্টারনেট এর অসুবিধা
দেখুন প্রত্যেক জিনিসের ভালো দিক গুলোর সাথে অবশ্যই তার খারাপ দিক রয়েছে। ঠিক একই ভাবে ইন্টারনেট এর সুবিধা গুলোর পাশাপাশি কিছু অসুবিধা অবশ্যই থাকবে।
তাহলে চলুন নিচে থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারের অসুবিধা গুলো জেনে আসি।
১. সারা দিন মোবাইল, কম্পিউটার বা ল্যাটপটে ইন্টারনেট নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করলে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়বে।
২. আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলে ম্যালওয়্যার ভাইরাস ঢুকে আপনার ডিভাইসের নানা ধরনের ক্ষতি করতে হবে।
৩. ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার মূলবান তথ্য গুলো হ্যাকিং করে নেওয়া হচ্ছে।
৪. ইন্টারনেটে থাকা বিভিন্ন পর্ণগ্রাফি ভিডিও দেখে যুবসমাজ ধংশ হয়ে যাচ্ছে।
৫. ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রতরণায় শিকার হচ্ছে।
ইন্টারনেট এর ইতিহাস
ইন্টারনেট আবিষ্কার করা সহজ কাজ ছিলো না। তাছাড়া কারও এক জনের পক্ষে এটা আবিষ্কার করার কৌশল খুঁজে বের করা সহজ ছিলোনা।
যখন ইন্টারনেটের ইতিহাস বলা হয় তখন দুই ব্যাক্তির কথা না বললে নয়। তারা হলেন ভিনটন জি কার্ফ এবং রবার্ট ই কান।
এই দুইজন মিলে প্রথমে Transmission control protocol (PCT) এবং internet protocol (IP) আবিষ্কার করেন। যার ফলে ইন্টারনেট আবিষ্কার করা অনেকটা সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৬৯ সনে আমেরিকান একটি এজেন্সি Arpanet স্হাপন করেন। এই প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিলো একটি কম্পিউটার ডিভাইস থেকে আর একটি কম্পিউটার ডিভাইসে সংযোগ করা।
১৯৮০ সানের পরে এই প্রযুক্তির নাম ইন্টারনেট হয়েছে। ১৯৮৩ সনে ইন্টারনেটের কার্যক্রম আরম্ভ হয়। তখন এটাকে বলা হতো network of network. পরে এটাকে মডিফাই করে ইন্টারনেট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এরপর ১৯৯০ সনে Computer scientist tim berners-lee উদ্ভাবিত করেন world wide web (www). এরপর থেকে ইন্টারনেটে কাজের মজা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলে আমরা জানলাম ইন্টারনেট কি, ইন্টারনেট কত প্রকার ও কি কি, ইন্টারনেট কে আবিষ্কার করেন, ইন্টারনেট এর ইতিহাস এবং সুবিধা ও অসুবিধা গুলো।
What is internet in bangla সম্পর্কে যদি আরো কোনো বিষয় জানতে চান তাহলে নিচের কমেন্ট জানাতে পারেন।