ক্যাপচা লেখার নিয়ম | ক্যাপচা পূরণ করার নিয়ম : আমরা ইন্টারনেটে যখন বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট গুলো ভিজিট করি বা অন্যান্য কাজ করি তখন অনেক সময় আমাদের নানা ধরনের ক্যাপচা পূরণ করতে হয়।
আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা এই ক্যাপচা গুলো পূ্রণ করতে পারে না। যার ফলে সেই ওয়েবসাইট ভিজিট বা অন্যান্য কাজ গুলো করতে পারে না।
আসলে আপনি কি জানেন কেন এই ক্যাপচা (CAPTCHA) গুলো পূরণ করে ওয়েবসাইটের মধ্যে প্রবেশ করতে হয়? যদি না জানেন তাহলে জেনে নিন।
ক্যাপচা মানুষ এবং কম্পিউটারের মধ্যে পার্থক্য বোঝার জন্য এই ক্যাপচা গুলো পূরণ করতে হয়। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে বিভিন্ন বট সফটওয়্যার গুলো অনেক উন্নত হচ্ছে।
এই বট সফটওয়্যার গুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য চুরি করে নেওয়ার জন্য স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে সাইবার হামলা করা হয়।
এই সাইবার হামলা থেকে ওয়েবসাইট গুলোকে সুরক্ষা করার জন্য প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটে ক্যাপচা (CAPTCHA) যুক্ত করা হয়েছে। যাতে সহজে যাচাই করা যায় ওয়েবসাইটের ট্রাফিক গুলো বট ট্রাফিক নাকি মানুষ।
ক্যাপচা পূরণ করার নিয়ম জানার আগে আমরা জেনে নিবো ক্যাপচা কি এর সম্পর্কে।
ক্যাপচা কি? (What is CAPTCHA)
ক্যাপচা হলো মানুষ ও কম্পিউটারের মধ্যে পার্থক্য বোঝার টিউরিং টেস্ট।
অনলাইনে নানা ধরনের কাজ করার সময় সেই কাজ গুলো মানুষ করছে নাকি বট সফটওয়্যার দ্বারা করানো হচ্ছে সেটা যাচাই করার জন্য কিছু বাঁকাতেরা ওয়ার্ড, ইমেজ, ক্যারেক্টার দিয়ে থাকে।
এই বাঁকাতেকা ওয়ার্ড, ইমেজ, ক্যারেক্টার গুলো বুঝে শুনে আইডিয়া করে বক্স পূর্ণ করাকে ক্যাপচা বলে।
এই ক্যাপচা কোড গুলো শুধু মানুষ বুঝতে পারে। কোনো ধরনের সফটওয়্যার বা রোবট এগুলো বুঝতে পারে না। যার ফলে রোবট ক্যাপচা পূরণ করতে পারে না।
ক্যাপচা এর পূর্ণরূপ কি? (Captcha meaning in bengali)
ক্যাপচা (CAPTCHA) এর পূর্ণরুপ বা ফুল ফর্ম হলো Completely Automated Public Turing Test To Tell Computers And Humans Apart.
ক্যাপচা এক মানুষ ও কম্পিউটারের মধ্যে পার্থক্য সহজে যাচাই করতে পারে।
কেন ক্যাপচা ব্যবহার করা হয়?
ওয়েবসাইটে বট ট্রাফিক রোধ এবং স্প্যাম প্রতিরোধ করার জন্য ক্যাপচা ব্যবহার করা হয়। যাতে বট সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করে বট তাদের একাউন্ট তৈরি করতে না পারে।
তাছাড়া ওয়েবসাইটের মূল্যবান তথ্য গুলো যাতে হ্যাকররা চুরি করতে না পারে তার জন্য এই ক্যাপচা কোড ব্যবহার করা হয়।
ক্যাপচা ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটে বট ট্রাফিক বা অবৈধ ট্রাফিক রোধ করতে পারবেন।
বিভিন্ন ধরনের ক্যাপচা লেখার নিয়ম
ক্যাপচা পূরণ করার নিয়ম অনেক সহজ কিন্তু কম্পিউটার বা রোবট সেটা করতে পারে না। কারণ কম্পিউটারের কাছে কৃত্রিম বুদ্ধি নেই। মানুষ কম্পিউটারে যে প্রোগ্রাম সেটআপ করে দিয়েছে সেটাই কম্পিউটার করে থাকে।
আমরা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার সময় বিভিন্ন ধরনের ক্যাপচা দেখতে পায়। এই প্রত্যেকটি ক্যাপচা কিভাবে পূরণ করতে হয় সেটা নিচে থেকে জানবো।
(১) টেক্সট ক্যাপচা পূরণ করার নিয়ম
অনেক ওয়েবসাইটে ভিজিট করার সময় এই টেক্সট ক্যাপচা গুলো দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া এই ক্যাপচা গুলো লেখা বা পূরণ করা অনেক সহজ।
আপনি যদি বাংলাদেশ জাতীয় পরিচয় পত্রের অনলাইন ওয়েবসাইট ভিজিট করেন তাহলে এমন ক্যাপচা দেখতে পাবেন।
উপরের ছবিতে তীর চিহ্নের মধ্যে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন ইংরেজিতে কিছু অক্ষর (2ghmn) লেখা রয়েছে। যার নিচে আর একটি বক্স রয়েছে।
এবার এই টেক্সট ক্যাপচা পূ্রন করার জন্য আপনাকে ইংরেজিতে লেখা অক্ষর (2ghmn) গুলো নিচের বক্সে সঠিক ভাবে লিখতে হবে।
তারপর লগইন (Login) বা সাবমিট (Submit) অপশনে ক্লিক করলে আপনার টেক্সট ক্যাপচা পূরণ করার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
(২) শব্দ সম্পর্কিত ক্যাপচা পূরণ করার নিয়ম
শব্দ সম্পর্কিত ক্যাপচার ক্ষেত্রে কয়েকটি অক্ষর এবং সংখ্যা থাকে উভয় থাকে। উক্ত শব্দের পাশে থাকা যে বক্স থাকে সেখানে শব্দ বা সংখ্যা গুলো লিখতে হয়।
এই শব্দ সম্পর্কিত ক্যাপচার ব্যবহার ইন্টারনেটে অনেক দেখা যায়। এই ক্যাপচা লেখার কাজ গুলো কম্পিউটার বা রোবট করতে পারে না। তাই এটাকে অনেকটা নিরাপদ পদ্ধতি বলা হয়।
(৩) গাণিতিক ক্যাপচা পূরণ করার নিয়ম
ইন্টারনেটে অনেক ওয়েবসাইটে এই গাণিতিক ক্যাপচা গুলো দেখতে পাবেন। এই ক্যাপচা গুলো লেখা অনেক সহজ। সাধারণত যোগ, বিয়োগ করার মাধ্যমে এই Captcha পূরণ করতে হয়।
যেমন, ৬ + ৩ = কত হবে? সেটা নিচে থাকা বক্সের মধ্যে লিখতে হবে। লেখার পরে নিচের লগইন বা সাবমিট অপশনে ক্লিক করলে ক্যাপচা পূরণ করা হয়ে যাবে।
(৪) পিকচার আইডেন্টিফিকেশন ক্যাপচা পূরণ করার নিয়ম
অনেক ওয়েবসাইট ভিজিট বা কাজ করার সময় এই পিকচার আইডেন্টিফিকেশন ক্যাপচা দেওয়া হয়। এখানে আপনাকে কোনো কিছু লিখতে হয় না।
এখানে ছবির উপরে একটি নাম দেওয়া থাকে এবং সেই নামের সাথে মিল রেখে নিচের ছবি গুলোর উপরে ক্লিক করতে হয়।
নিদিষ্ট ছবি গুলোর উপরে ক্লিক করার পরে নিচে থাকা ভেরিফাই (verify) অপশনে ক্লিক করলে ক্যাপচা পূরণ করা হয়ে যাবে।
(৫) নো ক্যাপচা রিক্যাপচা পূরণ করার নিয়ম
আপনারা অনেক সময় ইন্টারনেটে একটি ভিন্ন ধরনের ক্যাপচা দেখতে পান। যেমন – I’m not a robot এই ধরনের ক্যাপচা আপনাদের সামনে চলে আসে।
২০১৪ সালে এই ক্যাপচা নিয়ে আসেন গুগল। তারপর থেকে ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয় বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই ক্যাপচা পূরণ করার নিয়ম সম্পূর্ণ আলাদা।
এখানে I’m not a robot লেখা একটি চেক বক্স দেখতে পাবেন এবং সেই চেক বক্সে আপনাকে ক্লিক করতে হবে। এই ক্যাপচা পূরণ করা হবে আপনার মুভমেন্ট এর উপর ভিত্তি করে।
যেমন, কোনো বট সফটওয়্যার যদি এটা পূ্রন করতে আসে তাহলে সে চেকবক্সের ঠিক মধ্যে খানে ক্লিক করবে। চেক বক্সের মধ্যে খানে ক্লিক করাটা আপনি খালি চোখে দেখতে পাবেন না।
আর যখন কোনো মানুষ এটা পূরণ করতে যাবে তখন চেক বক্সের মধ্যে খানে ক্লিক করতে পারবে না। এরপরও যদি কেউ মধ্যে খানে ক্লিক করে তাহলে অন্য ধরনের ক্যাপচা দেওয়া হবে।
(৬) ইনভিজিবল রিক্যাপচা পূরণ করার নিয়ম
যদিও এই ক্যাপচা দেখতে অদৃশ্য মনে হলেও এটি অনেক উন্নত একটি ক্যাপচা ব্যবস্থা। এটা ওয়েবসাইটের এক কোণায় লোগোর মতো দেখতে পাওয়া যায়।
যদিও ওয়েবসাইটে ইনভিজিবল ক্যাপচা ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু এটা দৃশ্যমান থাকবে না। একজন ভিজিটর আপনার সাইটটি কিভাবে ব্যবহার করছে, কোথাও ক্লিক করছে সব কিছু নজর রাখবে এই ক্যাপচা।
এই ক্যাপচা গুলো ব্যবহার করা ওয়েবসাইটের মালিকের জন্য সুবিধা এবং প্রত্যেক ভিজিটরদের জন্য ও সুবিধা।
(৭) হানিপট ক্যাপচা লেখার নিয়ম
হানিপট ক্যাপচার মাধ্যমে ওয়েবসাইটে দৃশ্যমান শূণ্যস্থানের পাশাপাশি কিছু অদৃশ্যমান শূণ্যস্থান দেওয়া হয়।
এবার ওয়েবসাইটে যখন কোনো মানুষ প্রবেশ করবে তখন শুধু এই দৃশ্যমান শূণ্যস্থান গুলো পূ্রণ করবে। আর যখন কোনো বট ট্রাফিক প্রবেশ করবে তখন দৃশ্যমান শূন্যস্থান পূরণ করার পাশাপাশি অদৃশ্যমান শূণ্যস্থান গুলো পূ্রন করে।
এর ফলে খুব সহজে যাচাই করা যায় সাইটে মানুষ ভিজিট করছে নাকি বট ট্রাফিক ভিজিট করছে। এই হানিপট কে বলা হয় উন্নত ক্যাপচা।
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেল আমরা জানতে পারলাম ক্যাপচা লেখার নিয়ম বা বিভিন্ন ধরনের ক্যাপচা পূরণ করার নিয়ম সম্পর্কে।
এর পরেও যদি আপনার ক্যাপচা পূরণ করতে সমস্যা হয় তাহলে নিচের কমেন্টে জানাতে পারেন। আমি সমাধান দেওয়া চেষ্টা করবো।