আপনি যদি গ্রামে বাস করেন এবং গ্রামে ব্যবসা করার কথা চিন্তা করেন তাহলে এই গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া গুলো আপনার কাজে লাগবে।
আমাদের মধ্যে অনেকে মনে করে গ্রামে থেকে ভালো ব্যবসা করা যায় না। এজন্য অনেকে শহরে ব্যবসা করার কথা চিন্তা করে।
মনে রাখবেন, শহরে যেকোনো ব্যবহার প্রচুর লোকে করে থাকে। সেই তুলনায় গ্রামে খুব কম লোক আছে যারা ব্যবসা করে।
তাছাড়া, শহরের তুলনায় গ্রামের ব্যবসার প্রতিযোগিতা অনেক কম, যার ফলে সহজে ব্যবসা করে লাভবান হওয়া যায়।
বন্ধুরা আপনি হয়তো একটা সরকারি চাকরি করে প্রত্যেক মাসে যত টাকা বেতন পাবেন তার থেকে দ্বিগুণ পরিমানে টাকা আয় করতে পারবেন ছোট একটি ব্যবসা করে।
তাহলে চলুন নিচে থেকে জেনে আসি গ্রামে কি ধরনের ব্যবসা করা যায় বা গ্রামের সেরা ১০ টি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে।
গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া সেরা ১০ টি
আমি নিচে যে বিজনেস আইডিয়া গুলো শেয়ার করবো সেগুলো কেবল গ্রামে করতে পারবেন সেটা কিন্তু নয়। আপনি চাইলে শহরে এই আইডিয়া কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, আপনি যদি নিচে উল্লেখ করা ব্যবসা গুলো গ্রামের করার চিন্তা করেন তাহলে খুব বেশি মুলধনের প্রয়োজন হবে না।
তাছাড়া, আপনি ব্যবসায় যত বেশি টাকা মুলধন বিনিয়োগ করবেন ততো বেশি আয় করতে পারবেন এটাই স্বাভাবিক।
১. রেস্টুরেন্ট ব্যবসা
বর্তমানে শহরের মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে গ্রামের মানুষ ফাস্টফুড খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই গ্রামে ফাস্টফুড খাবার বিক্রি করার জন্য আপনি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
গ্রামে সচারাচর রেস্টুরেন্ট দেখা যায় না। তাই এই ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে আপনার জন্য সেরা ব্যবসা। তবে, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে জনবহুল এলাকা সিলেক্ট করতে হবে।
যে এলাকায় সব সময় লোক সংখ্যা বেশি থাকে সেখানে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করলে বেশি বেশি কাস্টমার পাবেন। তাছাড়া, আপনার গ্রামে যদি পর্যটন কেন্দ্র থাকে তাহলে এই ব্যবসা খুব ভালো চলবে।
যারা গ্রামে ব্যবসা করার কথা চিন্তা করছেন তারা ২-৩ লাখ টাকা ইনভেস্ট করে এই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।
২. কাঁচামালের ব্যবসা
আপনি হয়তো জানেন শহরে কাঁচা শাকসবজি চাষাবাদ হয় না। এজন্য শহরে সে সব কাঁচা শাকসবজি এবং ফলমূল গুলো পাওয়া যায় সেগুলো সব গ্রাম থেকে যায়।
তাই আপনি গ্রামের ব্যবসা হিসেবে কাঁচা শাকসবজির ব্যবসা করতে পারেন। আমার মতে এই ব্যবসা হবে সবচেয়ে লাভজনক।
কারণ, আপনি যে কাঁচা শাকসবজি এবং ফলমূল গুলো শহরে পাঠানোর জন্য ক্রয় করবেন, সেগুলো আপনার গ্রামে উৎপাদন করা হয়। যার জন্য কম দামে কিনতে পারবেন।
এবার আপনি গাড়িতে করে শহরে গিয়ে দ্বিগুণ বা তার বেশি দামে খুচরা দোকানে বিক্রি করতে পারবেন। গ্রামে এই কাঁচামালের ব্যবসা করার জন্য খুব বেশি মূলধনের প্রয়োজন পড়বে না।
আপনার কাছে যদি ৪০-৫০ হাজার টাকা থাকে তাহলে সহজে কাঁচামালের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। তাছাড়া, আপনি যেহেতু নিজের গ্রাম থেকে কাঁচামাল কিনবেন সেহেতু বিক্রি করে এসে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন।
৩. স্টক মালের ব্যবসা
আপনি যদি প্রতিদিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারের পণ্য গুলোর দিকে নজর দেন তাহলে বুঝতে পারবেন কিভাবে মূহুর্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একটু লক্ষ্য করুন এখানে থেকে কয়েক মাস আগে তেলের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা। বর্তমানে সেই তেলের কেজি ২১০ টাকা। ধানের বস্তা ছিলো ১৮০০ টাকা, বর্তমানে ২২০০ টাকা।
আপনি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্টক মালের ব্যবসা করতে পারেন। যখন পণ্যের দাম কম থাকে তখন পণ্য কিনে স্টক করে রাখতে পারেন।
তবে, স্টক মালের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। যেমন – পচনশীল পণ্য স্টক করে রাখলে আপনার হবে না। পচনশীল পণ্যের মধ্যে আলু অন্যতম।
আপনাকে এমন সব পণ্য সিজনের সময় কিনে রাখতে হবে যেগুলো স্টক করে রাখরে পচন ধরবে না। এক্ষেত্রে আপনি ধানের সিজনে কম মূল্যে ধান কিনে রাখতে পারেন।
কয়েক মাস পরে যখন ধানের মূল্য বৃদ্ধি পাবে তখন বেশি দামে ধান বিক্রি করে দিতে পারবেন। এভাবে আপনি পণ্য সিলেক্ট করে স্টক মালের ব্যবসা করে প্রত্যেক মাসে প্রচুর টাকা লাভ করতে পারবেন।
৪. সাপ্লাই পানির ব্যবসা
বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির খুবই সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামে বা শহরে বলেন সব জায়গায় বিশুদ্ধ পানির সংকট। বিশুদ্ধ পানির অভাবে আমরা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছি।
তাই আপনি গ্রামে বিশুদ্ধ সাপ্লাই পানির ব্যবসা করতে পারেন। এই ব্যবসা করার জন্য আপনার বেশ মূলধন জোগান দিতে হবে।
বর্তমানে এখন প্রায় সবাই নানা ধরনের রোগের হাত থেকে নিরাপদে বাঁচার জন্য বিশুদ্ধ পানির কিনে খাচ্ছে। তাই আপনি যদি এই গ্রামে সাপ্লাই পানির ব্যবসা করেন তাহলে দ্রুত সময়ে লাভবান হতে পারবেন।
তবে, সাপ্লাই পানির ব্যবসা করার জন্য বাজার বা জনবহুল এলাকা সিলেক্ট করে হবে। এতে আপনার পানি সেল অনেক বেশি হবে। প্রত্যেক লিটার পানি আপনি ৫০ পয়সা করে বিক্রি করতে পারবেন।
৫. ফার্মেসী ব্যবসা
গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া গুলোর মধ্যে আমি যত গুলো আইডিয়া বলেছি তার মধ্যে আদর্শ ব্যবসা হলো ফার্মেসী বিজনেস।
গ্রামে এই ব্যবসার চাহিদা প্রচুর পরিমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ গ্রামে তেমন ফার্মেসী দোকান দেখা যায় না। তবে, ফার্মেসী ব্যবসার জন্য আপনাকে শিক্ষিত হতে হবে। যাতে আপনি ওষুধের নাম পড়তে পারেন।
এছাড়াও ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার বেশ কিছু জিনিসের দরকার হবে।
- ট্রেড লাইসেন্স
- ড্রাগ লাইসেন্স
- ফার্মেসী দোকান
- মেডিকেল সার্টিফিকেট
- ঔষুধ ক্রয় করার মূলধন
উপরে উল্লেখ করা সব গুলো যদি আপনার কাছে থাকে তাহলে আপনি ফার্মেসী ব্যবসা করতে পারবেন। আর যদি না থাকে তাহলে জোগাড় করুন।
গ্রামে ফার্মেসী ব্যবসা করার প্রথমে আপনি ২-৩ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করতে পারেন। তবে, ততো বেশি টাকা মুলধন হবে ততো বেশি টাকা প্রতিদিন আয় করতে পারবেন।
চেষ্টা করবেন হাসপাতালের সামনে বা বাজারে ফার্মেসী দোকান নেওয়া জন্য।
আর সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনার ফার্মেসীতে একজন গ্রাম্য ডাক্তার বসাতে পারেন, তাহলে মানুষ অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে আসবে এবং আপনার দোকান থেকে ঔষধ ক্রয় করবে।
৬. মোবাইল রিচার্জ ও সার্ভিস
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আমরা সবাই মোবাইল ব্যবহার করি। শহরের পাশাপাশি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বর্তমানে মোবাইল ব্যবহার করেন।
প্রতিদিন আমরা মোবাইলের মাধ্যমে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনরা সহ আরো বিভিন্ন মানুষের সাথে যোগাযোগ করি। এক্ষেত্রে আমাদের মোবাইলে টাকা রিচার্জ করার প্রয়োজন পড়ে।
মানুষের এই প্রয়োজন টুকু কাজে লাগিয়ে আপনি গ্রামে মোবাইল রিচার্জ ও সার্ভিস এর ব্যবসা করতে পারেন।
মোবাইলে রিচার্জ করার পাশাপাশি মোবাইলের অন্যান্য জিনিসপত্র যেমন হেডফোন, চার্জার, স্কিন পেপার, ব্যাক কভার ইত্যাদি বিক্রি করতে পারেন।
এই সব জিনিসপত্র গুলো আপনি পাইকারি দামে কিনে এনে কাস্টমারের কাছে খুচরা দামে বিক্রি করে ভালো পরিমানে লাভ করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি যদি পারেন তাহলে একই ব্যবসার মধ্যে মোবাইল সার্ভিসের কাজ ও করতে পারবেন।
৭. কৃষি পণ্যের ব্যবসা
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষ বেশি কৃষি কাজ করে। তাছাড়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষের প্রধান পেশা কৃষি।
তাই গ্রামে কৃষি পণ্য যেমন – সার, কীটনাশক, বীজ ইত্যাদির চাহিদা প্রচুর। তাই গ্রামে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে আপনি কৃষি পণ্যের ব্যবসা করতে পারেন।
এই ব্যবসা করার মাধ্যমে এলাকার কৃষকদের সহায়তা করার পাশাপাশি নিজে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। তবে, এই কৃষি ব্যবসা আইডিয়া দিয়ে ব্যবসা করার জন্য আপনার ২-৩ লাখ টাকা মূলধন হলে ভালো হবে।
৮. ডিলারশিপ ব্যবসা
বর্তমানে শহরের সাথে তাল মিলিয়ে গ্রামের মানুষের জীবন যাত্রার মান অনেকটা উন্নত হয়েছে। তাছাড়া, গ্রামের মানুষের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও আসবাবপত্রে উপর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপনি ইলেকট্রনিক পণ্যের ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে, ডিলারশিপ ব্যবসায় মূলধনের পরিমান কিছুটা বেশি লাগবে।
আপনি টিভি, ফ্রিজ, রাইস কুকার, ফ্যান সহ আরো বিভিন্ন জিনিসপত্রের ডিলার নিতে পারেন। মনে রাখবেন, ডিলারশিপ ব্যবসাতে লসের পরিমান খুবই সামান্য। মানে এটা প্রকার লস ছাড়া ব্যবসা।
তাছাড়া, এখানে আপনার খরচ খুব কম। কারণ, কোম্পানি আপনার শোরুমে তাদের খরচে সকল পণ্য গুলো পৌঁছে দিবে। কোনো জিনিস যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সেটা কোম্পানি পরিবর্তন করে দিবে।
যত গুলো স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া রয়েছে তার মধ্যে ইলেক্ট্রনিক ডিলার শিপ ব্যবসা সব থেকে সেরা। এই ব্যবসার মাধ্যমে আপনি মাসে লাখ টাকার বেশি আয় করতে পারবেন।
৯. পশুর খামার ব্যবসা
বর্তমানে শিক্ষিত যুবকদের কাছে পশুর খামার তৈরি করা একটি লাভজনক পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুবকরা চাকরি না পেয়ে গ্রামে গিয়ে পশুর খামার করে অল্প দিনে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
আপনার যদি পশু পালনে প্রথমিক জ্ঞান না থাকে তাহলে প্রাণী সম্পাদ অধিদপ্তর অফিস থেকে পশু পালনের উপর জ্ঞান অর্জন করে নিতে পারবেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার পশু পালনের জন্য ব্যাংক লোন সহ আরো বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। বর্তমানে পশু খামার একটি লাভজনক ব্যবসা। কারণ এর চাহিদা সব সময় থাকে।
প্রথমে আপনি ১-২ গরু নিয়ে খামার শুরু করতে পারেন। ধীরে ধীরে পশুর সংখ্যা বাড়িতে নিতে পারবেন। আপনার খামারের কোনো পশু যদি রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে উপজেলা পশু হাসপাতাল থেকে বিনা খরচে চিৎসা নিতে পারবেন।
আমাদের দেশের এমন অনেক যুবক রয়েছে যারা পড়াশোনা শেষ করে গ্রামে এসে পশুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছে।
১০. বই এর দোকান (Book shop)
বই পড়ার মাধ্যমে আমরা জ্ঞান অর্জন করতে পারি। তাছাড়া, গ্রাম বা শহরের প্রত্যেক মানুষ বই পড়তে ভালোবাসে।
তবে, গ্রাম গঞ্জে তেমন ভালো বইয়ের দোকান দেখা যায় না। আর যদিও কয়েকটা বইয়ের দোকান পাওয়া যাবে কিন্তু সেখানে তেমন ভালো বই পাওয়া যায় না।
এজন্য গ্রামের লোকেরা সাধারণত শহরে আসে বই কেনার জন্য। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপনি গ্রামে বইয়ের ব্যবসা বা দোকান দিতে পারেন।
সব সময় চেষ্টা করবেন বাজারে বা স্কুল কলেজের সামনে বইয়ের দোকান দেওয়া জন্য। তাহলে সেখানে আপনার বিক্রি বেশি হবে।
সব ধরনের বই আপনি দোকানে রাখার চেষ্টা করবেন যাতে কাস্টমার রা বই কিনতে এসে ফিরে না যায়। তাছাড়া বই কেনা এবং বিক্রি করার জন্য কোম্পানির কাছ থেকে আপনি নিদিষ্ট পরিমান কমিশন পাবেন।
প্রথমে ১-২ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে বইয়ের ব্যবসা শুরু করলে মাসে আপনি ২০-২৫ হাজার টাকা সহজে আয় করতে পারবেন।
শেষ কথা
আজকে আমরা জানলাম গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া বা গ্রামে কি ধরনের ব্যবসা করা যায় সেই সম্পর্কে সেরা ১০টি আইডিয়া।
শেষে, গ্রামের বিজনেস আইডিয়া গুলো যদি আপনাদের কাছে ভালো লাগে তাহলে আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন। আর কোনো বিষয় জানার থাকলে কমেন্টে লিখে রাখবেন।