ফ্রিল্যান্সিং কি মোবাইলে করা যায় এই প্রশ্নের উত্তর হওয়তো আপনার কাছে অজানা। তাই আজকের আর্টিকেলে বলবো মোবাইল দিয়ে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়।
আপনি যদি মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
অনেকে মনে করে মোবাইলে ফেসবুক আর ইউটিউব ভিডিও দেখা ছাড়া আর কোনো কিছু করা যায় না। এটা আপনার ভুল ধারণা।
বর্তমান মোবাইল গুলোর যে ক্ষমতা রয়েছে, আগের কম্পিউটার গুলোর সেই ক্ষমতা ছিলে না। কারণ, বর্তমান মোবাইলে হাই কোয়ালিটির গেম যেমন পাবজি, ফ্রী-ফায়ার সহজে খেলতে পারবেন।
আগের কম্পিউটার গুলোতে ভিডিও গেম খেলার মতো ক্ষমতা ছিলো না। তাই আধুনিক মোবাইলে যখন কম্পিউটারের মতো গেম গুলো খেলা যাচ্ছে তখন অবশ্যই মোবাইলে কম্পিউটারের কাজ করা যাবে।
তবে, হা মোবাইল দিয়ে কম্পিউটারের সকল কাজ গুলো করা যাবে না। কিন্তু কিছু কিছু কাজ অবশ্যই করা সম্ভব। আর এই কাজ গুলোর মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং ক্যাটাগরিতে যে কাজ গুলো রয়েছে সেগুলো আপনি করতে পারবেন।
mobile দিয়ে freelancing করা যায় কিনা সেটা জানার আগে আপনাকে জানতে হবে “ফ্রিল্যান্সিং কি”? তাহলে চলুন নিচে থেকে জেনে আসি।
ফ্রিল্যান্সিং কি? (What is freelancing)
ফ্রিল্যান্সিং হলো এমন একটি পেশা যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে ইনকাম করতে পারবেন।
বলতে গেলে একটা অনেকটা চাকরির মতন। কিন্তু চাকরিতে যেমন আপনাকে নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত অফিসে কাজ করতে হয়। আর ফ্রিল্যান্সিং এ আপনি সম্পূর্ণ ফ্রী সময় ইচ্ছা স্বাধীন কাজ করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য আপনার ধরা বাধা কোনো অফিস টাইম নেই। যখন খুশি কাজ করলে হলো। এখন মন চাচ্ছে কাজ করলেন, আবার এখন মন চাচ্ছে না কাজ করবেন না।
চাকরিতে যেমন আপনাকে অফিসে নিদিষ্ট স্থানে বসে অফিস করতে হয় এবং আপনার একজন বস আছে। ফ্রিল্যান্সিং এর নিদিষ্ট কোনো অফিস নেই, যেখানে সেখানে বসে কাজ করতে পারবেন।
বাড়িতে বসে দেশে বিদেশের বিভিন্ন বায়ারদের সাথে কাজ করতে পারবেন। আপনার যদি দক্ষতা থাকে তাহলে চাকরির থেকে কয়েক গুন বেশি টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আশাকরি Freelancing কি সহজে বুঝতে পারছেন।
ফ্রিল্যান্সিং কি মোবাইলে করা যায়?
মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার কথা প্রথমে কেউ শুনলে হয়তো হাসাহাসি করবে। কিন্তু সত্য হলো mobile দিয়ে freelancing এর কিছু কিছু কাজ করা সম্ভব।
কম্পিউটারে আপনি যে কাজ গুলো সহজে করতে পারবেন, মোবাইলে সেই কাজ গুলো করতে বেশ কিছু সময় লাগবে। কি মোবাইলে কাজ করতে এই বেশি সময় টুকু দিতে রাজি আছেন তো?
তাহলে চলুন নিচে থেকে জেনে আসি মোবাইল দিয়ে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়। এবং কোন কোন কাজ গুলো করা সম্ভব।
মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এর কোন কোন কাজ গুলো করা যায়?
অনলাইন ইনকাম করার সব থেকে জনপ্রিয় উপায় হলো ফ্রিল্যান্সিং। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করতে চান কিন্ত আপনার কম্পিউটার নেই তাহলে কি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন না?
হা অবশ্যই পারবেন। আমি অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে এমন অনেক ক্যাটাগরির কাজ দেখেছি যেগুলো মোবাইল দিয়ে করা সম্ভব।
তাহলে আমরা আজকের প্রশ্ন ফ্রিল্যান্সিং কি মোবাইলে করা যায় এর উত্তর জানলাম। এবার জানবো ফ্রিল্যান্সিং ক্যাটাগরির কাজ গুলোর মধ্যে মোবাইলে কি কি কাজ করা সম্ভব।
(১) গ্রাফিক্স ডিজাইন
মোবাইল দিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ গুলোর মধ্যে কিছু কাজ করা সম্ভব। কিন্ত আপনি যখন প্রফেশনাল ভাবে কাজ করতে যাবেন তখন অবশ্যই আপনার কম্পিউটার প্রয়োজন হবে।
তবে, মোবাইল দিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন করার জন্য এমন কিছু অ্যাপস রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে সহজে ডিজাইনের কাজ করতে পারবেন।
এই অ্যাপস গুলোর ব্যবহার জানার জন্য আপনি ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখলে সহজে শিখতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর যে ছোট ছোট কাজ রয়েছে সেগুলো অ্যাপের মাধ্যমে করতে পারবেন।
আমি নিচে মোবাইল দিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন করার জনপ্রিয় কিছু অ্যাপের নাম বলে দিয়েছি।
- Canva
- PixelLab
- Photoshop Express Photo Editor
- Snapseed
- Picsart
এই অ্যাপস গুলো আমি নিজেও ব্যবহার করি। আমার এই ওয়েবসাইটে যে লোগো ডিজাইন করা হয়েছে সেটা আমি এই PixelLab অ্যাপের মাধ্যমে করেছি।
(২) কনটেন্ট রাইটিং
কনটেন্ট রাইটিং করার জন্য আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপের প্রয়োজন হবে না। আপনি মোবাইল দিয়ে সহজে কনটেন্ট রাইটিং করতে পারবেন।
মোবাইলে আমরা প্রত্যেক দিন বাংলা বা ইংরেজিতে অনেক টেক্সট (text) লিখে থাকি। তাই আপনার যদি কনটেন্ট রাইটিং এর উপর দক্ষতা থাকে তাহলে লেখালেখি করে ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
বিভিন্ন কিওয়ার্ড এর উপর আপনার লেখা গুলো দেশ বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানি বা ওয়েবসাইটের কাছে সেল করতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনাকে কনটেন্ট রাইটিং শিখতে হবে।
আমি নিজে একজন কনটেন্ট রাইটার। আমার এই ওয়েবসাইট সহ আমি আরো কয়েকটি ওয়েবসাইটে কনটেন্ট রাইটিং করছি। এর জন্য আমি জনপ্রিয় কিছু অ্যাপস এর নাম নিচে বলে দিয়েছি।
- Microsoft Office World
- Google Dose
- WPS Office
এই অ্যাপস গুলোর মাধ্যমে আপনার লেখা কনটেন্ট গুলো সংরক্ষণ করতে পারবেন। আমি নিজের কনটেন্ট সংরক্ষণ করার জন্য Google dose ব্যবহার করি।
(৩) ইউটিউব
মোবাইল দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে সেখানে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। বর্তমানে এমন অনেক ইউটিউবার রয়েছে যারা মোবাইল দিয়ে সকল কাজ করে।
মোবাইল দিয়ে ভিডিও রেকর্ড, ভিডিও এডিটিং সব কিছু করতে পারবেন একদম প্রফেশনাল ভাবে। আমাদের দেশে এমন অনেক ইউটিউবার রয়েছে যারা মোবাইলে ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে টাকা ইনকাম করছে।
মোবাইলে সুন্দর ও আকর্ষনীয় ভিডিও এডিটিং করার জন্য নিচে জনপ্রিয় কয়েকটি ভিডিও এডিটিং টুলস বা সফটওয়্যারের এর নাম নিচে উল্লেখ করেছি।
- KineMaster
- PowerDirector
- Inshot
(৪) ব্লগিং
মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম করার সব থেকে সহজ উপায় হলো ব্লগিং। আমি নিজে প্রথমে মোবাইল দিয়ে ব্লগিং শুরু করেছি। পরে ল্যাপটপ কিনছি।
আপনি অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের জন্য বা নিজের ওয়েবসাইটের জন্য কনটেন্ট লিখে ইনকাম করতে পারবেন। এই লেখালেখি করার কাজ খবু সহজে মোবাইলে করা যায়।
ব্লগিং করার জন্য আপনাকে কনটেন্ট রাইটিং এবং কীওয়ার্ড রিসার্চ করা শিখতে হবে। তাহলে খুব দ্রুত সময়ে সফল হতে পারবেন। কীওয়ার্ড রিসার্চ করার করার জন্য আপনি google keyword planner টুল ব্যবহার করতে পারেন।
(৫) ট্রানসলেশন
মোবাইলে কাজ করার জন্য ট্রানসলেশন এর কাজ আপনার জন্য সেরা হতে পারে। ট্রানসলেশন কাজ করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন ভাষা সম্পর্কে জানতে হবে।
আপনি শুধু বাংলা ভাষা জানলে কিন্তু এই কাজ করতে পারবেন না। ট্রানসলেশনের কাজ হলো এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তরিত করা।
যেমন বাংলা ভাষা থেকে ইংরেজি ভাষা, আবার ইংরেজি থেকে বাংলা, বাংলা থেকে আরবি, আরবি থেকে উর্দু সহ বেশ কিছু ভাষা সম্পর্কে জানতে হবে।
আপনি যদি ভাষা গুলো জানেন তাহলে মোবাইল দিয়ে এই ট্রানসলেশন করার কাজ করতে পারবেন।
শেষ কথা
আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন অনলাইন মার্কেটপ্লেসের কিছু কিছু কাজ মোবাইল দিয়ে করা সম্ভব।
আশাকরি আপনার প্রশ্ন ফ্রিল্যান্সিং কি মোবাইলে করা যায় এর সঠিক উত্তর পেয়ে গেছেন। Mobile দিয়ে freelancing এই সম্পর্কে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন।